একটি সরল ফ্যান্টাসি

সরলতা (অক্টোবর ২০১২)

আদিব নাবিল
  • ১৮
  • 0
  • ১০
ঘরের এপাশ ওপাশ পায়চারি করছেন আর বাঘের মত গজরাচ্ছেন তিনি। একের পর এক ফোন কল আসছে আর ক্ষোভে ক্রোধে মুখের রং পাল্টাচ্ছে। সন্ধ্যে গড়িযে রাত হলো, অস্থিরতা বাড়ছেই তার। রাত একটু গভীর হতে দেখা গেল চিন্তামগ্ন হয়ে সোফায় বসা। সমস্ত ফোন বন্ধ করে বিছানায় গেলেন এক সময়।
………………………………………………………………………
শহর জুড়ে নেতার পোস্টার। তিনি আসছেন! দ্বিমুখী প্রস্তুতি- ফুল দিয়ে বরণ, আর কাঁটা বিছিয়ে অভিবাদন।

-যে দেয় সে ক্যান ফিরাইয়া নিতে পারবো না?
-আমরা যদি নির্বাচিত করতে পারি, আমরা তাহলে অনির্বাচিত ঘোষনাও করতে পারি।
-এটি সংবিধান সম্মত নয়।
-এটা জনতার ইনহেরেন্ট ক্ষমতা। সংবিধান, আইন-কানুনের ব্যাখ্যা পণ্ডিতেরা তৈরী করুক।

সরকার পারে, আদালত পারে, দল পারে- পারে না শুধু জনগণ। একজন নির্বাচিত স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিকে সরকার বরখাস্ত করতে পারে। একজন সাংসদকে তার দল ভিন্নমত প্রকাশের কারণে বহিষ্কার করতে পারে। নানা শর্তভঙ্গ, আইন লংঘন, আদালতের নির্দেশে কত নির্বাচিত প্রতিনিধির প্রতিনিধিত্ব বাতিল হয়। সবাই ক্ষমতাশীল, একমাত্র জনগণ ছাড়া। অথচ বলা হয় জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস। যারা প্রতিনিধি নির্বাচিত করেন, তারা প্রতিনিধিত্ব কেড়ে নিতে পারে না।

এসব কথাবার্তা কোন টকশো কিংবা ভাবগম্ভীর মতবিনিময় সভার নয়। চায়ের কাপে ধোঁয়া তোলা কোন আড্ডা কিংবা জ্যামে আটকে পড়া কিছু যাত্রীরও আলাপ নয়। একটি প্রতিনিধিত্বশীল এলাকার নির্বাচক একদল আম-মানুষের যূথবদ্ধ প্রতিজ্ঞা সৃষ্টির পথে মতদ্বৈততা।

যুক্তি, তর্ক, ব্যাখ্যা, উপব্যাখ্যা শেষে যৌথ ঘোষণা বেরিয়ে আসলো- ‘‘অমুক এলাকার লোকজন কর্তৃক তমুককে অনির্বাচিত ঘোষণা করা হলো।’’

এদিকে অনেকদিন জনবিচ্ছিন্ন ‘তমুক’ বছরখানেক পর এলাকায় আসবেন বলে ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন। তমুকের পক্ষের গুটিকয়েক জনবিচ্ছিন্ন অনুচর, কানুন-কায়দার ধারক, আর তল্পিবাহকেরা মিলে ঐতিহাসিক(!) মহা-আগমনের সকল ব্যবস্থা করে ফেলেছেন। বিশাল শো-ডাউন হবে। বড় বড় গেইট তৈরি হচ্ছে, রংচংয়ে ব্যানার….শ’দুয়েক মোটর সাইকেল, শ’খানেক মোটরযান নিয়ে ‘তমুক’কে বরণ করা হবে।

একদিকে আম-জনতার বিক্ষোভ চলছে। প্রতিবাদ হচ্ছে, তমুকের কীর্তিকলাপ নিয়ে শ্লোগানে শ্লোগানে উত্তাল এলাকা। আরেকদিকে ছোট্ট পরিসরে শলা চলে কীভাবে তমুকের আগমন এবং পদচারণা নির্বিঘ্ন করা যায়। ষড়যন্ত্রের জাল বিছানোর নক্সা তৈরি চলে।

বিশাল এক মিছিল এগিয়ে আসছে। শহরের গোল চত্ত্বরে সভা হবে। হয়তো হরতাল ধর্মঘট বা এজাতীয় চূড়ান্ত পদক্ষেপের ঘোষণা আসবে। সংকল্পে বাঁধা একদল মানুষ, এলাকার ‘আত্মা’র সম্মানে যেভাবেই হোক ‘তমুক’কে প্রতিরোধ করা হবে।

মিছিলের মাঝে একজন আগন্তক ঢুকলো। একটি মোটর সাইকেলযোগে এসে অলক্ষ্যে নেমে পড়লো। হেলমেটসহই মানুষের সাথে মিশে গেল। হাজার মানুষের মাঝে কে আসলো কে গেলো কেই বা খবর রাখে। এমনও নয় সবাই সবাইকে চেনে। চোখে কালো চশমা, পুরো মাথা ও আংশিক মুখ হেলমেটের ধাতব অংশে ঢাকা। এই গরমেও গায়ে জ্যাকেট। কেউ কেউ ভয়মিশ্রিত সন্দেহের চোখে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিল। ভদ্র অভদ্র সব আন্দোলনেই এরকম দু’য়েকজন অংশ নেয়। মাঠে থাকতে হলে এদের দরকার আছে। ধীরে ধীরে সামনে এগুতে থাকলো। মিছিলের মাথা যখন চৌ-রাস্তার মোড়ে, সেও ততক্ষণে সামনে পৌঁছে গেছে।

মিছিলের নের্তৃবৃন্দ পথসভায় বক্তব্য এবং চূড়ান্ত ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। হেলমেটধারী ব্যক্তিও নিজেকে প্রস্তুত করছেন। সিদ্ধান্তটি নিতে কষ্ট হয়েছে তার, মনের সাথে লড়াই করে অনেক কঠিন এক কাজের দায়িত্ব নিয়েছে সে। বুক কাঁপছে তার ঢিপ ঢিপ করে, সবকিছু ঠিকঠাক সামলানো যাবে তো!….মহা আলোড়ন সৃষ্টির আগে কেমন যেন এক শীতল অনুভূতি!

মাইক হাতে নিতে যাবেন আম-জনতা প্রধান। মৃদু আলোড়ন উঠলো সামনে থেকে। হেলমেটধারী মাঝখানে পৌঁছে গেল। লহমায় মাইকটি হাতে নিল। ঘটনার আকস্মিকতায় চমকে ভড়কে গেল নের্তৃবৃন্দ এবং সামনের মানুষেরা। অতটুকু সময়ই যথেষ্ট ছিল তার জন্য। হেলমেট খুলে ফেললো, সরে গেল চোখের চশমা…..

-‘তমুক’ ভাই…….বিস্মিত জনগণের এককণ্ঠে উচ্চারন।

‘‘প্রিয় এলাকাবাসী….আমি আশা করছি আপনারা শান্তিমত আমার দুটো কথা শুনবেন। হ্যা আমি আপনাদের অবাঞ্ছিত ‘তমুক’….আমার আগামীকাল আসার কথা ছিল। ….আপনারা আমাকে পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত করেছিলেন, রাষ্ট্রীয় আইনের মধ্যে আপনারা আমাকে সরাতে পারেন না।….জানি না কোন ভুলে এত দূরে চলে গেছি আমি। তবে আমার ‘হাতে তৈরি’ অনেকের সাথে চ্যালেঞ্জে হেরে যাওয়ার মানুষ নই আমি। …..আমার এখানে আসা, ঘোরাফেরা নিশ্চিত করা হযেছে- গতকাল পর্যন্ত আমার ভাবনা এই লাইনেই ছিল।….আজ ঘুম থেকে উঠে নতুন এক সকাল দেখেছি আমি, আমার নষ্ট দুটি কান সজাগ হয়েছে। রাজধানীতে বসে আপনাদের আওয়াজগুলো স্পষ্ট শুনতে পেয়েছি।….হৃদয়ের তন্ত্রীগুলোর অবরোধ ছুটে গেছে, জনতার ডাক এখন সেখানে সরাসরি পৌঁছে যাচ্ছে….জানতে শুনতে মানতে করতে আমার আর কোন মন্ত্রণাদাতা লাগছে না আজ। কোন প্রটোকলও আর প্রয়োজন নেই আমার।….তাই একাই এসেছি।… ’’

গণকণ্ঠে শোরগোল ওঠে আবার। বিশ্বাস করতে চায় না জনগণ। চুন খেয়ে মুখ তাতা মানুষ, দই দেখেও স্বাদ নিতে সাহস করে না। পকেট থেকে এক টুকরো কাগজ বের করলেন তিনি।

……এই নিন আমার ফয়সালা। আমি আর কাল আসছি না।’’ জনতার সামনেই ইস্তফাপত্রে সই করে হস্তান্তর করলেন। নির্বাক মানুষের সামনে নীরবে হেঁটে সাধারণ্যে মিশে গেলেন তিনি।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মিলন বনিক বরাবরের মত সুন্দর গল্প...বাস্তব এমনটিই হলে ভালো হত....অনেক ভালো লাগলো....শুভ কামনা....
এশরার লতিফ আপনার গল্পটি পরে বড়ই আনন্দ পেলাম, শুভকামনা ।
ঝরা ভাল লেগেছে খুব।
মামুন ম. আজিজ স্টাইলটা দারুন লেগেছে্ , কল্পনার মাঝে এমন সমাধান খুবই দরকার বাস্তবেও
ম্যারিনা নাসরিন সীমা স্বপ্ন দেখতে দোষ নেই । বাস্তবে যদি কখনো ঘটে যায় ! চমৎকার লেখা !
কামরুল হাছান মাসুক ভাল লাগল। সুন্দর করে সাজিয়েছেন।
অষ্টবসু একমাত্র জনগণ ছাড়া। অথচ বলা হয় জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস। যারা প্রতিনিধি নির্বাচিত করেন, তারা প্রতিনিধিত্ব কেড়ে নিতে পারে না।...erakam ekti andolan bharate chalche Anna Hazarer netritte dekha jak ki hoi..bhalo laglo
প্রিয়ম আশা করছি , সুভো হোক এই কামনায় ...........................|

০২ ফেব্রুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ২৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪